ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট একটি অজৈব যৌগ যার রাসায়নিক সংকেত Ca(OCl)Cl। পানি পরিশোধন এবং ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে ক্লোরিন পাউডার অথবা ব্লিচ পাউডার নামে বাজারে পাওয়া যায়। আর্দ্র এবং অনাদ্র দুই অবস্থায় ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট পাওয়া যায়। এটা পানিতে খুব বেশি দ্রবীভূত হয় না। এর থেকে তীব্র ক্লোরিনের গন্ধ পাওয়া যায়।
ব্যবহার
জীবাণুনাশক হিসাবে, পানি বিশুদ্ধ করতে, ক্লোরোফর্ম প্রস্তুতিতে, এবং বস্ত্র বিরঞ্জন করতে ব্যবহৃত হয় ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয় ।
Video Link
পানিতে কিছুটা ক্লোরিন তথা ব্লিচিং পাউডার
টাইপের গন্ধ থাকে। গৃহস্থালীতে এভাবে পানি শোধন করে সেই পানিকে সামান্য গরম
করলেই সমস্ত গন্ধ চলে যাওয়ার কথা। আমাদের দেশে মানুষ পানিতে ক্লোরিন তথা
ব্লিচিং-এর গন্ধ পেলে নাক সিটকায়, অথচ উন্নত বিশ্বে বরং এই গন্ধ পেলেই পানি
পান করতে নিরাপদ বোধ করে মানুষ, আর সরবরাহকৃত পানিতে ক্লোরিনের গন্ধ না
থাকলেই সেই পানি পান করতে ইতস্তত করে।
জীবাণুনাশক হিসাবে পানিকে বিশুদ্ধ করতে
ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয়। ক্লোরোফর্ম প্রস্তুতিতে ব্লিচিং পাউডার
ব্যবহার করা হয়। কাগজশিল্পে এবং বস্ত্র বিরঞ্জন করতে ব্লিচিং পাউডার
ব্যবহার করা হয় ।
বাড়ির আশপাশে ভেজা স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বা
টয়লেটের কমোড, ঘরের মেঝে ইত্যাদি জায়গা থেকে জীবাণু ধ্বংস করার জন্য
ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যায়। ব্লিচিং পাউডারকে যখন ভেজা স্যাঁতসেঁতে
জায়গায় ছিটিয়ে দেওয়া হয় বা টয়লেটের কমোড, বেসিনে দেওয়ার পর পানি যোগ
করা হয়, তখন ব্লিচিং পাউডার পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাইপোক্লোরাস এসিড
(HOCl) এবং ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড উৎপন্ন করে। পরবর্তীতে হাইপোক্লোরাস এসিড
ভেঙে গিয়ে জায়মান অক্সিজেন তৈরি করে যা জীবণুকে ধ্বংস করে।
এছাড়া বাসা-বাড়ির নিচতলায় এবং ছাদে পানির
ট্যাংকিগুলো পানিতে জীবাণু প্রবেশের অন্যতম পথ। তাই এই ট্যাংকিগুলো এবং
ব্যবহারের শুরুতে পুরা পানি সরবরাহ পাইপগুলোকে জীবাণুমুক্ত করে নেয়া জরুরি।
অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে একটা জেরিকেনে ব্লিচিং গুলে সেখান থেকে ট্যাংকির
পানিতে ফোটায় ফোটায় পড়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নিয়মিতভাবে দৈনিক ফ্রেস
ব্লিচিং দ্রবণ দিলে জীবাণুর সম্ভাবনা তো কমবেই, বরং পানি ফুটিয়ে খাওয়ার
প্রয়োজনীয়তাও ফুরাতে পারে।
গ্রামাঞ্চলের কিছু জায়গায় এখনও পাতকুয়া বা
ইন্দারা খাবার পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এমনকি কোনো কোনো জায়গায়
সংরক্ষিত পুকুরের পানিও রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। এই উৎসগুলোও মাঝে
মাঝে জীবাণুমুক্ত করার দরকার হয়ে পড়ে। এই উৎসগুলোতে পানি প্রাকৃতিকভাবে
উন্মুক্ত থাকে বলে অবিরত জীবাণুনাশ করা প্রয়োজন। এজন্য এখানকার পানিতে
অবিরত স্বল্পমাত্রায় ক্লোরিন বা ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে কলস পদ্ধতির মাধ্যমে
পানি জীবাণুনাশ করা হয়।
সতর্কতা
অনেকে ঘরদোর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কারের
কাজে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করেন। এতে ঘরদোর ঝকঝকে হয় বটে, কিন্তু শিশুরা
শ্বাসতন্ত্রসহ নানা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ব্লিচিং পাউডারের মধ্যেই বিভিন্ন ক্ষতিকারক
উপাদান লুকিয়ে রয়েছে। যদি সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসে ব্লিচিং পাউডার
তাহলে তা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তেমনি ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করলে
শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল
মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই সতর্কতার কথা বলা
হয়েছে।